মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:২৭ অপরাহ্ন

এক নজরে এ টি এম শামসুজ্জামানের ৮০ বছরের গল্প

এক নজরে এ টি এম শামসুজ্জামানের ৮০ বছরের গল্প

বিনোদন ডেস্ক:

কিংবদন্তী তারকা একুশে পদকপ্রাপ্ত বর্ষীয়ান অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান আর নেই। দীর্ঘদিন রোগে ভোগার পর আজ সকালে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে শুধু অভিনয়েই নয়, তার পদচারণা ছিল দেশের নাটক-সিনেমার চিত্রনাট্য ও নির্মাণ ইতিহাসেও।

১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর দৌলতপুরে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন এ টি এম শামসুজ্জামান। বাবা নূরুজ্জামান ছিলেন নামকরা উকিল। মাতা নুরুন্নেসা বেগম। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। পড়াশোনা করেছেন ঢাকার পগোজ স্কুল, ময়মনসিংহ সিটি কলেজিয়েট স্কুল ও রাজশাহীর লোকনাথ হাই স্কুলে। পগোজ স্কুলে তার বন্ধু ছিলেন আরেক অভিনেতা প্রবীর মিত্র। ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন ময়মনসিংহ সিটি কলেজিয়েট হাই স্কুল থেকে। তারপর জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন।

এ টি এম শামসুজ্জামানের শুরুটা ছিল মঞ্চ দিয়ে। কৌতুক অভিনেতা হিসেবে শুরু করেছিলেন চলচ্চিত্রজীবন। তারপর খল অভিনেতা হিসেবেও পান তুমুল করতালি। তার লেখা প্রথম কাহিনি ও চিত্রনাট্য ছিল নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘জলছবি’ চলচিত্রের জন্য। এর মাধ্যমেই অভিনেতা ফারুকের চলচ্চিত্রে অভিষেক। শতাধিক চিত্রনাট্য ও কাহিনি লিখেছেন এ টি এম শামসুজ্জামান।

অভিনেতা হিসেবে তার চলচ্চিত্র পর্দায় আগমন ১৯৬৫ সালের দিকে। তবে ১৯৭৬ সালে আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমণি’ চলচ্চিত্রে খলনায়কের চরিত্রের মাধ্যমে আলোচনায় আসেন তিনি। ১৯৮৭ সালে কাজী হায়াত পরিচালিত ‘দায়ী কে’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। রেদওয়ান রনি পরিচালিত ‘চোরাবালি’তে অভিনয় করেন ও শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব-চরিত্রে অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।

একাধারে তিনি কাজ করেছেন অভিনেতা, পরিচালক, কাহিনিকার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপ রচয়িতা ও গল্পকার হিসেবে। বড় বিষয়,এই অভিনেতা ছিলেন ইন্ডাস্ট্রির সর্বজন শ্রদ্ধেয়। আর দর্শক ভালোবাসার কথা উল্লেখ করার প্রয়োজনই নেই। শিল্পকলায় অবদানের জন্য ২০১৫ সালে পেয়েছেন একুশে পদক।

১৯৬১ সালে পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবেও কাজ করেন তিনি। খান আতাউর রহমান, কাজী জহির, সুভাষ দত্তের সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন এ টি এম শামসুজ্জামান। ২০০৯ সালে প্রথম পরিচালনা করেন শাবনূর-রিয়াজ জুটিকে নিয়ে ‘এবাদত’ নামের ছবি।

অভিনয়-নির্মাণের পাশাপাশি একজন লেখক হিসেবেও এ টি এম শামসুজ্জামান সফল। কাহিনিকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। এই অভিনেতা নাটক-সিনেমার পাণ্ডুলিপির বাইরে গল্প-কবিতাও লেখার চর্চা করেছেন নানাভাবে।

অভিনয়জীবনের শুরুতে ষাটের দশকে টিভি নাটকে অংশগ্রহণ ছিল তার। যা অব্যাহত ছিলো জীবনের শেষপ্রান্ত পর্যন্ত। তার উল্লেখযোগ্য টিভি ধারাবাহিকের মধ্যে রয়েছে হলো- ‘রঙের মানুষ’, ‘ভবের হাট’, ‘ঘর কুটুম’, ‘বউ চুরি’, ‘নোয়াশাল’ প্রভৃতি।

অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘বড় বউ’, ‘অবুঝ মন’, ‘ওরা ১১ জন’, ‘শ্লোগান’, ‘স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা’, ‘সংগ্রাম’, ‘ভুল যখন ভাঙলো’, ‘চোখের জলে’, ‘লাঠিয়াল’, ‘অভাগী’, ‘নয়নমনি’, ‘যাদুর বাঁশি’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘অশিক্ষিত’, ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘লাল কাজল’, ‘পুরস্কার’, ‘প্রিন্সেস টিনা খান’, ‘রামের সুমতি’, ‘ঢাকা ৮৬’, ‘দায়ী কে?’, ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’, ‘দোলনা’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘অজান্তে’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘তোমার জন্য পাগল’, ‘ম্যাডাম ফুলি’, ‘চুড়িওয়ালা’, ‘শ্বশুরবাড়ী জিন্দাবাদ’, ‘জামাই শ্বশুর’, ‘আধিয়ার’, ‘শাস্তি’, ‘মোল্লা বাড়ির বউ’, ‘হাজার বছর ধরে’, ‘আমার স্বপ্ন তুমি’, ‘দাদীমা’, ‘আয়না’, ‘ডাক্তার বাড়ী’, ‘চাঁদের মতো বউ’, ‘মন বসেনা পড়ার টেবিলে’, ‘এবাদাত’সহ অসংখ্য ছবি।

তিনি ছিলেন ইন্ডাস্ট্রির সর্বজন শ্রদ্ধেয়। তবে পারিবারিক জীবনে খানিক ব্যর্থতার ছাপ এনেছে তার দুই পুত্র। ২০১২ সালে তার বড় সন্তান এ টি এম কামালুজ্জামান কবিরকে নিজ বাসায় হত্যা করে ছোট ছেলে এ টি এম খলিকুজ্জামান কুশল। এরপর পিতা হয়েও ছোট ছেলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন কিংবদন্তি এই অভিনেতা। আদালতে গিয়ে সাক্ষ্যও দেন। ভাইকে হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন জেল হয় কুশলের। তবে অভিনেতার অন্য এক ছেলে এবং ৩ মেয়ে মৃত্যু পর্যন্ত বাবাকে আগলে রেখেছিলেন পরম মমতায়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877